বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশেও জনপ্রিয় হচ্ছে ওয়েব সিরিজ। জনপ্রিয়তার সাথে সাথে বাড়ছে সমালোচনাও। ওয়েব সিরিজে প্রদর্শিত অশ্লীল ও আপত্তিকর দৃশ্যের জন্য সম্প্রতি প্রকাশিত তিনটি ওয়েব সিরিজ বেশ বিতর্কিত হয়। এমন বাস্তবতায় দেশের বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে পরিবেশিত সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজে প্রদর্শিত অশ্লীল ও আপত্তিকর দৃশ্য সরিয়ে ফেলতে সরকারকে আইনি নোটিশও দেওয়া হয়েছে। বিস্তারিত জানাচ্ছেন ফাতেমা কাউসার। সিনেমা নাটকের পাশাপাশি সারা বিশ্বেই এখন জনপ্রিয় ওয়েব সিরিজ। বাংলাদেশের নির্মাতারাও ঝুঁকছেন সে দিকে। দর্শক চাহিদা বাড়লেও কিছু কিছু ওয়েব সিরিজ হচ্ছে সমালোচিতও। ওয়াহিদ তারিকের ‘বুমেরাং’, সুমন আনোয়ারের ‘সদরঘাটের টাইগার’ ও শিহাব শাহীনের ‘আগস্ট ১৪’ এই তিনটি সিরিজ মুক্তির পরপরই রীতিমতো বিতর্ক উসকে দিয়েছে। টেলিভিশনে নিজস্ব সংস্কৃতি বজায় রেখে অভিনয় করা অভিনয় শিল্পীদেরও দেখা যায় এমব ওয়েব সিরিজে অশালীন দৃশ্যে অভিনয় করতে। একটি নির্দিষ্ট প্লাটফর্মে ফি দিয়ে প্রাপ্তবয়স্কদের এসব ওয়েব সিরিজ দেখার কথা থাকলেও যা দেখা যাচ্ছে ইউটিউবের মতো ওপেন প্লাটফর্মে। নির্মাতারা বলছেন গল্পের প্রয়োজনেই এমন দৃশ্য সংলাপের ব্যবহার। এমন বাস্তবতায় দেশের বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে পরিবেশিত সিনেমা এবং ওয়েব সিরিজে প্রদর্শিত অশ্লীল ও আপত্তিকর দৃশ্য সরিয়ে ফেলতে বা সম্প্রচার বন্ধ করতে সরকারকে আইনি নোটিশ দিয়েছেন মো. তানভীর আহমেদ।দেশ চলচ্চিত্র সেন্সর বোর্ডের বিধিনিষেধ যেমন রয়েছে। নাটক কিংবা ওয়েব সিরিজেও তেমন সেন্সর বোর্ড চাইছেন অনেকে। যদিও অনেক নির্মাতা তা মানতে নারাজ। নির্মাতাদের গালি, কিংবা অশালীন দৃশ্য ব্যবহারে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি পাইরেসি বন্ধের জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন মহল।
ওয়েব সিরিজের নামে অশ্লিলতা, অনলাইন প্লাটফর্মে নজরদারি বাড়ানোর দাবি 17Jun.20
বাংলা ওয়েব সিরিজ: বিতর্কের কারণ কী যৌনতা, নাকি অন্যকিছু
রাকিব হাসনাতবিবিসি বাংলা, ঢাকা
- ২২ জুন ২০২০

রুখসানা আহমেদ ঢাকার মগবাজার এলাকার বাসিন্দা। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেন। গত ঈদের ছুটিতে এবং এরপর করোনাভাইরাস জনিত সাধারণ ছুটির সময়ে (বেসরকারি অফিস হলেও তাকে নিয়মিত অফিসে যেতে হতোনা) বাসায় সময় কাটিয়েছেন মূলত নেটফ্লিক্সে মুভি দেখে।
“আমি মুভির চেয়ে সিরিজ দেখতে পছন্দ করি। অনেকগুলো সিরিজ দেখলাম এই সুযোগে। কাহিনীগুলো বেশ মজার ও আকর্ষণীয়,” বলছিলেন তিনি।
তবে তিনি যে সিরিজগুলো দেখেছেন তা মূলত ইংরেজি ও স্প্যানিশ। এর বাইরে হিন্দি সিরিজও বাংলাদেশে অনেকের কাছে জনপ্রিয়।
মূলত ইংরেজি ও হিন্দি ওয়েব সিরিজগুলোই বাংলাদেশের অনেক দর্শকের কাছে প্রিয়।
এবং এমনই একজন হলেন শামীমা সালাউদ্দিন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই সাবেক শিক্ষার্থী বলছেন, “বিদেশি ভাষায় এতো আগ্রহ নিয়ে আমরা সিরিজগুলো দেখি। অথচ বাংলায় ওয়েব সিরিজ হয়না কেনো জানিনা। অথচ এখানকার সামাজিক পটভূমিতে কত চমৎকার গল্প বা কাহিনী ছড়িয়ে আছে”।

তবে বাংলায় ওয়েব সিরিজ নিয়ে শামীমা সালাউদ্দিনের এই আক্ষেপ এখন ভিন্ন বাস্তবতায় রূপ নিয়েছে।
কারণ সম্প্রতি তিনজন নির্মাতা বাংলাতেই তিনি ওয়েব সিরিজ নির্মাণ করেছেন যা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
এর মধ্যে একটির বিষয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৭৯জন শিল্পী, নির্মাতা ও পরিচালক।
এর মধ্যে রয়েছেন বিশিষ্ট অভিনয় শিল্পী মামুনুর রশীদের নামও।
বিবিসি বাংলাকে তিনি বলছেন, “এখন ওয়েব সিরিজে যা দেখানো হচ্ছে দেশ এটা দেখার জন্য প্রস্তুত না। শ্লীলতা বা অশ্লীলতাই একটা আপত্তির জায়গা। দুর্নীতি বা এ ধরনের অনাচার নিয়ে কিন্তু এসব সিরিজ হয়না, হয় সেক্স আর ভায়োলেন্স নিয়ে”।
তিনি বলেন এখানে যে ওয়েব সিরিজ হয়েছে সেখানে এমনও হয়েছে যে ভাষার চরম বিকৃতি ঘটানো হয়েছে কিন্তু টেলিভিশন কি এভাবে আমরা শূন্যে ছেড়ে দিবো?
তবে তার এ বক্তব্যের সাথে একমত নন তরুণ নির্মাতা ও লেখক আশফাক নিপুণ।

বিবিসি বাংলায় আরও পড়ুন:
‘সেলফোন আর দুজন নায়ক নায়িকা- এটাই নাটক’
ভারতে নেটফ্লিক্স কেন হিন্দুত্ববাদীদের তোপের মুখে?
নিষিদ্ধ ইরানি পরিচালকের যে সিনেমা পুরষ্কার জিতলো
তিনি বলছেন, “ওয়েব সিরিজ টেলিভিশনের মতো কোনো মাধ্যম না। ওয়েব সিরিজ দেখার জন্য আপনাকে কয়েক ধাপ পেরিয়ে সেটি কিনতে হবে। এটি একটি সেন্সর প্রক্রিয়া। অর্থাৎ আপনি কোনটি দেখবেন সেটি আপনিই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন। ধরুন কেউ যদি মনে করে যে আমি হরর মুভি দেখবোনা তাহলে তিনি সেই কনটেন্ট দেখবেন না। কিন্তু তাই বলে তিনি তো দাবি করতে পারেননা যে হরর মুভি সরিয়ে দিন”।
ওয়েব সিরিজ আসলে কী? নাটকের সাথে পার্থক্য কোথায়?
ওটিটি বা ওভার দ্য টপ হলো প্লাটফরমটির নাম যেভাবে ওয়েব সিরিজগুলো দেখা যায়। ইন্টারনেট-ভিত্তিক প্লাটফরম যেখানে কাউকে প্লাটফরমটি ডাউনলোড করতে হয়। এরপর নির্ধারিত ফি দিয়ে গ্রাহক হতে হবে। তারপর সেখানে থাকা অসংখ্য কনটেন্টের ভেতর থেকে যে কেউ বেছে নিয়ে পছন্দনীয় কনটেন্ট দেখতে পারেন।
অর্থাৎ এটি টেলিভিশনের মতো সেট ওপেন করে রিমোট ঘুরালেই কোনো চ্যানেলে আসবেনা।
আবার ইউটিউবের মতো ফ্রি জায়গাও নয় যে কনটেন্টগুলো মন চাইলেই দেখে ফেললাম।

সুপরিচিত নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলছেন বৃহৎ ভাষাগুলোর মধ্যে ম্যান্ডারিন, স্প্যানিশ, ইংরেজি ও হিন্দির পরেই বাংলা।
“ম্যান্ডারিনে ওয়েব সিরিজ কেমন হয় আমি জানিনা। কিন্তু স্প্যানিশ ওয়েব সিরিজ দাপট চালাচ্ছে বিশ্বজুড়ে। তুমুল জনপ্রিয়তা আছে ইংরেজি ও হিন্দিরও। বিশ্বে এর বাজারটা এতো বড় যে বাংলারও অনেক সুযোগ আছে যা আমরা এখনো নিতে পারছিনা”।
বাংলায় যেভাবে শুরু হলো
নেটফ্লিক্স যেমন নিজের প্রযোজনায় অনেক মুভি বা সিরিজ নির্মাণ করে, সেই একই আদলে বিনজ নামের একটি দেশীয় অ্যাপের প্রযোজনায় বাংলাতেই তৈরি হয়েছে তিনটি ওয়েব সিরিজ।
এগুলো হলো শিহাব শাহীনের ‘১৪ অগাস্ট’, ওয়াহিদ তারেকের ‘বুমেরাং’ ও সুমন আনোয়ারের ‘সদরঘাটের টাইগার।’
শিহাব শাহীন বলছেন, তিনি সত্যি ঘটনা অবলম্বনেই সিরিজটি বানিয়েছেন।
লেখক ও নির্মাতা আশফাক নিপুণ বলছেন, ওয়েব সিরিজ এমন একটি জায়গা যেখানে প্রচুর মানুষের প্রচুর ধরণের কাজের সুযোগ আছে।
যেমন ধরুন ‘১৪ অগাস্ট’ সিরিজটির কাজ হয়েছে ২৮টি লোকেশনে এবং এতে ১৪০ জন কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন।
“অথচ আপনি দেখুন টেলিভিশনে এমন নাটক গেছে যেখানে মাত্র দু’জন কাজ করেছেন”।
যদিও সিরিজ তিনটিতেই অতিমাত্রায় যৌনতা, অশ্লীলতা বা অশ্লীল সংলাপের ব্যবহার হয়েছে বলে অভিযোগ করছেন মামুনুর রশীদের মতো সিনিয়র অভিনেতা-নির্মাতা।
ফলে এ নিয়ে গত কিছুদিন ধরেই শুরু হয়েছে তীব্র আলোচনা সমালোচনা।
মামুনুর রশীদের অভিযোগ, “এসব ওয়েব সিরিজের মূল বিষয়ই হলো যৌনতা আর সহিংসতা”।
যদিও ওয়েব সিরিজ নির্মাতাদের একজন শিহাব শাহীন বলছেন, “আমি সত্যি ঘটনা নিয়ে সিরিজটি বানিয়েছি। এখানে পুরো সত্যিটা বললে আরও অনেক কিছু আসতো। আমি শুধু গল্পের প্রয়োজনে যেটুকু এসেছে সেটুকুই ব্যবহার করেছি দৃশ্য হিসেবে। কিন্তু কেউ কেউ তার মধ্য থেকে ৩০ সেকেন্ডের একটি খণ্ডিত অংশ নিয়েই শোরগোল তুলছেন”।

বিতর্ক, বিবৃতি, সংস্কৃতি ইস্যু
একটি সিরিজে অভিনেতা-অভিনেত্রীর শয্যায় একটি দৃশ্য বেশ আলোচনায় এসেছে – আর এমন কয়েকটি দৃশ্যের অবতারণা করে অনেকে ব্যঙ্গ করে এগুলোকে ‘নীল ছবি’ আখ্যায়িত করে গণমাধ্যমেই লিখেছেন।
এর কারণ হলো বন্ধুদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা বাসায় একা একা অ্যাডাল্ট মুভি দেখার মতো দৃশ্য থাকার কথা জানিয়েছেন অনেকে।
আর এমন কিছু দৃশ্যকে সামনে সম্প্রতি এসব ওয়েব সিরিজ নিয়ে অনেক লেখালেখিও হচ্ছে ঢাকার পত্রপত্রিকা কিংবা ওয়েব পোর্টালে।
এমনকি ওয়েব সিরিজ থেকে কথিত অশ্লীল অংশ বাদ দেয়ার জন্য আইনি নোটিশও এসেছে একজন আইনজীবীর কাছ থেকে।
আবার দেশের ১১৮ জন সুপরিচিত নির্মাতা এক বিবৃতিতে বলেছেন, “… আমাদের দেশে ওয়েব প্লাটফর্মে পথচলাটা যেহেতু খুব নতুন সেখানে প্রথমেই কোন বিচ্যুতি বা ভুলভাবে ব্যাখ্যা হবার কারণে যদি শুরুতেই এর চলার পথটা থমকে যায়, অথবা এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কলাকুশলীরা সাইবার বুলিং-এর শিকার হয় বা বৈচিত্র্যময় কন্টেন্ট নির্মাণের পথ বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে তা বাংলাদেশের বিনোদন শিল্পের জন্য একটি বিরাট অন্তরায় হিসেবে দেখা দিবে”।
তারা বলেন, “টিভি বা ওয়েব সিরিজ যাই হোকনা কেন তার জন্য একটি স্বাধীন মতামত প্রকাশের সুযোগ বাস্তবায়ন ও সেই সাথে পাইরেসি প্রতিরোধ করে নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মের কন্টেন্ট নির্দিষ্ট প্ল্যাটফর্মে পরিবেশনার ব্যাপারে একটি আধুনিক নীতিমালা করতে সরকার আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন এবং এই বৈশ্বিক ডিজিটাল অর্থনৈতিক বিপ্লবে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করার সুযোগ তৈরি করবেন বলেই আমরা বিশ্বাস করি”।
অর্থাৎ তারা ওয়েব সিরিজগুলো নিয়ে যে বিতর্ক হচ্ছে তার জন্য মূলত পাইরেসিকে দায়ী করেছেন।
এর মানে হলো সিরিজগুলো দেখতে সাবস্ক্রাইব করা হলেও পেরে সেগুলো হ্যাকিং বা পাইরেসির শিকার হয়ে কিছু দৃশ্য ছড়িয়ে পড়েছে যেগুলো অশ্লীল বলে মনে হচ্ছে অনেকের কাছে।
তবে দেশের সিনিয়র অভিনেতা অভিনেত্রীসহ ৭৯ জন আরেকটি বিবৃতিতে আরও কঠোর ভাষায় ওয়েব সিরিজ গুলোর সমালোচনা করেছেন।
তারা বলছেন, “অনেকদিন ধরে কিছু ইউটিউব এবং ওয়েব প্ল্যাটফর্মে অত্যন্ত দায়িত্বহীনতার সাথে কিছু নির্মাতা প্রযোজক, নাট্যকার ও অভিনয়শিল্পী কুরুচিপূর্ণ নাটক পরিবেশন করে আসছে। এই নাটকগুলির মধ্যে কাহিনীর প্রয়োজনে নয় একেবারেই বিকৃত রুচিসম্পন্ন নাটক নির্মাণ করে বিবেকবান ও সচেতন দর্শকদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। আমরা এহেন কাজকে তীব্রভাবে ভর্ৎসনা করি, নিন্দা জানাই”।
যে ৭৯জনের বিবৃতিতে এটি এসেছে সেখানে নাম আছে মামুনুর রশীদেরও।
তিনি বিবিসিকে বলছেন, “এগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের নামে বিকৃতির দিকে চলে গেছে। ভাষাকে চরমভাবে বিকৃত করা হয়েছে। ওয়েবকে স্মার্ট ফোনের কথা বলে বিচ্ছিন্ন ভাবার কিছু নেই। এটি এখন পারিবারিক মাধ্যমেও পরিণত হয়েছে। বাসায় অনেকে বড় টেলিভিশন সেটের সামনে বসে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তাতে ইউটিউব দেখে, নেটফ্লিক্স থেকে মুভি বা সিরিজ দেখে। আমাদের সংস্কৃতি অনুযায়ী আমরাও ওয়েব সিরিজ বানাতে পারি। এজন একিট রেগুলেশন কমিশন থাকা উচিত যারা সার্টিফিকেশন দিবে”।
তিনি বলেন, ”এখানে ওয়েব সিরিজের নামে যা হয়েছে তা আমরা দেখেছি ও আমাদের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হয়েছে। এজন্যই একটা সার্টিফিকেশন সিস্টেম থাকা জরুরি।”
একমত নন নির্মাতা শিহাব শাহীন
যে ওয়েব সিরিজ নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে তার একটি ১৪ অগাস্ট, যার নির্মাতা শিহাব শাহীন।
গত মাসের শেষ মুক্তি পাওয়া এ সিরিজের শুরুতেই বলা হয়েছে এটি ১৮ বছরের কম বয়সীদের জন্য নয়। বাংলাদেশের বেশ কয়েকজন সুপরিচিত অভিনেতা অভিনেত্রী এতে অভিনয় করেছেন।
ধারণা করা হয় এক পুলিশ দম্পতি হত্যার একটি আলোচিত সত্য ঘটনাকে ভিত্তি করেই এ সিরিজটি তৈরি হয়েছে।
এতে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা নীল ছবি দেখার মতো দৃশ্য এসেছে বলে বলা হচ্ছে।
নির্মাতা শিহাব শাহীন বলছেন, “পাইরেসি করে একটি খন্ডিত অংশকে ছড়িয়ে দেয়ায় এমন বিতর্ক হয়েছে। আমি একটি বৈচিত্রপুর্ণ গল্প নিয়ে হাজির হওয়ার চেষ্টা করেছি এবং সংস্কৃতির সাথে বিশ্বস্ত থেকেই তা করতে চেয়েছি । কারও ভালো লাগবে, কারওে লাগবেনা এটাই স্বাভাবিক”।
তিনি বলেন, “আসলে মনে হচ্ছে একটা চক্রান্তের শিকার হচ্ছি। আমার ২১৭ মিনিটের ওয়েব সিরিজ থেকে আধা মিনিট কেটে বিভিন্ন জায়াগায় পাঠানো হচ্ছে। যারা নেতিবাচক মন্তব্য করছে তারা সম্পূর্ণ অংশ না দেখেই মন্তব্য করছেন। দয়া করে পুরোটা দেখে মন্তব্য করুন। একটু ভিন্ন করে বলতে চেয়েছি”।
তিনি বলেন একটি দুটি কনটেন্ট দিয়ে সংস্কৃতির কিছু আসে যায়না, বরং এটি নির্ভর করে ব্যক্তির ওপর।
“১২ বছর প্রেমের নাটক বানিয়েছি। তখন বলো হলো একই কাজ করি কেউ দেখতে চায়না এগুলো। তাই এবার বৈচিত্রময় গল্প নিয়ে এসেছি। তাতে কোনো অঙ্গ প্রদর্শন না করে ঘটনাকে প্রতীকি হিসেবে দেখিয়েছি।”
বিতর্কের কারণ কী নতুন কিছু গ্রহণ না করার মানসিকতা?
তরুণ নির্মাতা ও লেখক আশফাক নিপুণ বিবিসি বাংলাকে বলছেন, যখনি নতুন কিছু আসে বা দেখতে অভ্যস্ত না এমন কিছু আসলে সেটা বিতর্ক তৈরি করে। নির্বাক ছায়াছবি থেকে যখন সবাক সিনেমা বানানো শুরু হয়, তখন চার্লি চাপলিন নিজেও তার বিরোধিতা করেছিলেন।
“হুমায়ুন আহমেদ যখন সহজ ভাষায় লেখা শুরু করেন তখন বলা হলো এটা ঠিক উপন্যাসের ভাষা নয়। আবার টেলিভিশনে যখন ঘরোয়া স্টাইলে সংলাপ বলা শুরু হলো তখনও সমালোচনা হলো। তবে এবারের বিতর্ক আরও দু:খজনক। কারণ ওয়েব সিরিজ কোনো ওপেন প্লাটফরমে নেই। এটা কিনে দেখতে হয়। অর্থাৎ যে দেখবে এটি তার সিদ্ধান্ত। কেউ দেখলে দেখবে,না দেখলে নেই। কিন্তু এটি থাকা যাবেনা এমনটি বলা অন্যায়।”
তিনি বলেন, যারা এখন সংস্কৃতির কথা বলছেন তারা ভালো করেই জানেন একসময় টেলিভিশন আমাদের সংস্কৃতি ছিলো না, কিন্তু তা হয়েছে। আর টেলিভিশনকে নতুন করে ধ্বংসের কিছু নেই।
“ওয়েবে সুবিধা হলো নতুন নতুন গল্প বলা যায় এবং পুরো বিশ্বে এর অ্যাক্সেস আছে সেখানে গল্প যা ডিমান্ড করে সেই দৃশ্য থাকবে। সেটা সংস্কৃতির চিন্তা করে ফেলে দেয়া যাবেনা কারণ এটা বিশ্ব ব্যাপী ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য দর্শকের জন্য”।
তাই আমি বলবো ওয়েব সিরিজ একটি নতুন সম্ভাবনার সুযোগ উন্মোচন করেছে এবং সবাইকেই সেটি কাজে লাগানো উচিত, বলছিলেন আশফাক নিপুণ।
মামুনুর রশীদ অবশ্য বলছেন, তারা চাননা ওয়েব সিরিজ নির্মাণের সুযোগ বন্ধ হোক।
“বরং আমরা চাই সমাজ জুড়ে যে দুর্নীতি , অনিয়ম , অনাচার সেগুলো তারা তুলে আনুক- যেগুলো আমরা টেলিভিশনে দেখাতে পারিনা,” বলছিলেন তিনি।
বিতর্ক এড়াতে নীতিমালা চান নির্মাতারা অনেকে
১১৮ জন নির্মাতা যে বিবৃতিতে দিয়েছেন তাতে নাম আছে গিয়াস উদ্দিন সেলিমের।
বিবিসিকে তিনি বলছেন, এখানে প্রথমেই যে ভুল হয়েছে তা হলো যেটি কিনে দেখতে হয় সেটি ফ্রি মিডিয়ায় চলে এসেছে এবং ছোট ছোট ক্লিপ ব্যবহার করে সেগুলো দেখেই ছিছি করা হচ্ছে।
“একটা নীতিমালা থাকা উচিত যে প্রাপ্তবয়ষ্কদের জন্য কিনা বা কোনটা ভায়োলেন্স বা ভূতের ছবি। এ ধরণের ক্যাটাগরি থাকলে সেটা সবার জন্য ভালো হবে। তা না হলে আমরা পিছিয়ে পড়বো ও নতুন এ সুযোগকে কাজে লাগানো কঠিন হয়ে দাঁড়াবে”।
তবে শিহাব শাহীন বলছেন তারাও নীতিমালা চান তবে সেটি যেন সেন্সর না হয়।
“আমরা বিধি চাই, কিন্তু নিষেধ চাইনা। মনে রাখতে হবে যে নেটফ্লিক্স আ্যামাজন সেন্সর করবেন কি করে। আমরা চাই ঢাকা হোক কনটেন্ট নির্মাণের রাজধানী ও বাংলা ওয়েব সিরিজের মূল ক্ষেত্র”।