বাংলা আর্ট ফ্লিমে মাদকতা-যৌনতা-আর নিপুণতা

চঞ্চল স্বভাবের জন্য সবাই তাকে ভীষন ভালবাসে। তার অবাধ স্বাধীনতা। আমাদের বাড়ির আশে-পাশে ধুরে বেড়াতো। বয়েসে রঙ লেগেছে, সেটা তার মনে ছিলনা। নারী শরিরের আকর্ষন সবে বোঝা শুরু করেছি। তাই সাগরিকার শরিরের যৌন অঙ্গগুলো বেশ মাদকতা ছড়াতো। কালিদাস কবির ভাষায় নিম্ন নাভি, পিনাগ্র স্তন – যেন এক শকুন্তলা। সাগরিকা দেখতেও ছিল বেশ। এরকম অনেক গল্পে নির্মিত বাংলা আর্ট ফ্লিমে ছড়িয়ে আছে মাদকতা-যৌনতা-আর নিপুণতা।

 

সংস্কৃতি এবং যৌনতা, শিল্প আর অশ্লীলতা কাকন রেজা :

ভারতীয় সিনেমার নাচ নিয়ে মন্তব্য করেছেন বলিউড অভিনেত্রী-নায়িকা প্রিয়াংকা চোপড়া। তিনি বলেছেন, ‘ভারতীয় সিনেমার নাচে নিতম্ব আর স্তনটাই প্রধান’। ফেসবুকের নিউজফিডে খবরটা দেখলাম। সাধারণত সিনেমা সম্পর্কে আলোচনায় আমি কিছুটা অনাগ্রহী। তা সত্বেও সাহস করে প্রিয়াংকা চোপড়া যখন সত্যটা বলেই ফেলেছেন, তখন কিছুটা আলোচনা করাই যায়।দক্ষিণ এশিয়ার সিনেমা শিল্পটা টিকে আছে মূলত শরীরী আবেদনে। ফাঁকে কিছু সিনেমা হয়তো গল্পকে প্রাধান্য দিয়ে নির্মিত হয়েছে এবং তা ব্যবসাতেও সফলতার মুখ দেখেছে। যেমন, আমীর খানের ‘থ্রি ইডিয়টস’। কিন্তু এই সংখ্যা খুব বেশি নয়। মূলধারাতে মূলত শরীরটাই উপজীব্য। প্রিয়াংকা চোপড়া সত্যের প্রতিধ্বনিটাই করেছেন। খবরানুযায়ী এই মন্তব্যের কারণে তাকে নানা কথা শুনতে হয়েছে। সোশ্যালমিডিয়ায় ভারতীয় সংস্কৃতি বিষয়ক এক্সপার্টরা না-কী নানা বাক্যবাণে জর্জরিত করেছেন তাকে। এটাই স্বাভাবিক। মানুষ ক্রমাগত যখন একটি ধারায় টিউনড হয়ে যায়, তখন তার বিরুদ্ধে কোন কথা হলে, তাতে সে রিঅ্যাক্ট করবেই। ভারতীয় সিনেমা পরম্পরাগত ভাবে অমন ধারাতেই টিউনড। আমাদের কৈশোরে একজন নায়িকা ছিলেন মন্দাকিনী নামে। যিনি স্রেফ যৌনতার কারণে বিখ্যাত হয়েছিলেন। নায়ককে বাঁচানোর জন্য নিজের স্তনদানের দৃশ্য তিনি দেখিয়েছিলেন দর্শকদের এবং সঙ্গত কারণেই তাকে নিয়ে হইচই শুরু হয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো, অমন দৃশ্যতেও তৎকালীন অনেকে ‘আর্ট’ খুঁজে পেয়েছিলেন। হালের কলকাতার ‘আর্ট ফিল্ম’গুলো যেমন হয় আর কী। কলকাতার আর্ট ফিল্ম মানেই ভোকাট্টা যৌনতা। সম্ভবত সেখানে যৌনতাই আর্ট। ‘লিভ টুগেদার’, ‘ব্রোকেন ফ্যামিলি’ শারীরীক চাহিদা-অপূর্ণতা, তুই-তোকারির প্রেমে শরীরী তৃষ্ণা আর অবশ্যই পরকীয়া ইত্যাদিসবের যৌন দৃশ্যায়নই কলকাতার ‘আর্ট ফিল্ম’। দেখলে মনে হয়, ‘সফ্টকোর’ দেখছি। সুতরাং প্রিয়াংকা চোপড়া’র মন্তব্যে ভারতীয় দর্শকদের, শিল্প-সংস্কৃতির কর্তাদের রাগান্বিত হওয়াটা খুব একটা অযৌক্তিক নয়।  যৌনতা কি জীবনের বাইরের কোন কিছু, এমন প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, না। যৌনতা জীবনের বাইরের কিছু তো নয়ই, বরং ভেতরের কিছু। মানুষের যাপিত জীবনের একান্ত নিজস্ব অংশ, গোপন কিছু। প্রকাশ্যের অংশ নয়। নববিবাহিত দম্পত্তি বাসর রাতে ঘরে ঢুকে দরোজা লাগিয়ে দিলেন, এটুকু দেখালেই ভেতরে কী হবে বা কী হচ্ছে তা বোঝা যায়। লদকা-লদকি না দেখালেও চলে- দরোজা বন্ধ হওয়ার দৃশ্যটাই শিল্প, লদকা-লদকি যৌনতা। দরোজার অভ্যন্তরের দেখানো দৃশ্য তখনই শিল্প হবে যখন, যৌনতার বাইরে অন্য কিছু থাকবে- থাকবে অন্য কোনো দৃশ্যপট। বাসরঘরের যৌনতা যদি দেখাতেই হয় তবে, সেটাকে ‘সফ্টকোর’ ক্যাটিাগরিতে ফেললেই ভালো। কামসূত্র ধরণের সিনেমা মেইনস্ট্রিম হতে পারে না।জানি, এ লেখাতেও অনেক আপত্তি আসবে। উদাহরণ টানা হবে পুরষ্কার পাওয়া সিনেমাগুলির। বলা হবে, তবে কী সেগুলো আর্ট নয়, অবশ্যই। কিন্তু বাসরঘরের স্বাভাবিক যৌনতা আর্ট নয়, সেটা স্রেফ যৌনতা। আর যৌনতা কখন ‘আর্ট’ বা শিল্প হয় তা বুঝতে মানসিক ভাবে তৈরি হতে হবে। ঢালাও ভাবে সবাইকে শিল্পের সমঝদার ভাবতে গেলেই পড়তে হবে মুশকিলে। ‘স্তন’ আর ‘নিতম্ব’ দুলিয়ে যখন নাচা হয়, তখন তা ঢালাও সবার জন্যই হয়, শুধু ‘আর্টে’র ভোক্তাদের জন্য নয়। ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অংশ যৌনতা নির্ভর। (কেনো নির্ভর, কিভাবে নির্ভর, তা অন্য আলোচনা, অন্য সময় বলা যাবে।) যার জন্যই ঢালাও ভাবে যৌনতা চলে এসেছে সিনেমায়। স্বর্গের উর্বশীদের নাচ যখন সিনেমায় দেখানো হয়, তখন দেখা যায় নৃত্যরত উর্বশীদের শরীরের কোন অংশটি প্রকট, খোলামেলা। উর্বশীদের নৃত্য দেখানোর সাথে পুরষ্কার প্রাপ্ত সিনেমার সিকোয়েন্স যদি কেউ মিলিয়ে ফেলতে চান তাহলে সেটা তার ব্যর্থতা, শিল্পের নয়।প্রিয়াংকা চোপড়ার মন্তব্যে যারা বিরূপ সমালোচনা করেছেন, তাদের আগে ভাবতে হবে- স্বর্গের উর্বশীর নাচ দেখাতে গেলে, নাচের মূদ্রা প্রধান হবে, না প্রধান হবে আঁটো বুক-নিতম্ব, খোলা পেট-নাভি। মূদ্রাটা শিল্প, আর আঁটো বুক-নিতম্ব, খোলা পেট-নাভি অশ্লীলতা। অশ্লীলতার সাথে শিল্পের কোন সম্পর্ক নেই। অবশ্য এখন অনেকেই যৌনতাকে শিল্প হিসাবে আখ্যা দিতে শুরু করেছেন। একদিন হয়তো যৌনকর্মীর বদলে শুনতে হবে যৌনশিল্পী উপমাটি। প্রিয়াংকা চোপড়া’র কথা হয়তো তারই প্রতিধ্বনি।পুনশ্চ : প্রিয়াংকা চোপড়া স্রেফ বিনোদনের বলিউড ছেড়ে আন্তর্জাতিক শিল্পালয়ে ঢুকে পড়েছেন, তাই হয়তো তার এমন সত্য উপলব্ধি। 

লেখাটি আমাদের নতুন সময় ও আমাদের সময় ডটকমে প্রকাশিত